আসসালামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক যারা আজকে আমাদের জেলা পরিচিতি সুনামগঞ্জ কে নিয়ে লেখা আর্টিকেল কি পড়েছেন বা পরবর্তীতে পড়বেন সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন । আর দেরি না করে চলুন শুরু করি আজকের আর্টিকেল টি ।
সুনামগঞ্জ জেলা অবস্থান
সুনামগঞ্জ জেলা সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় যে সুনামগঞ্জ জেলার প্রাচীন কামরুপ কামাক্কা অন্তর্গত ছিল । সুনামগঞ্জ জেলার পূর্বে সিলেট জেলা, পশ্চিমে নেত্রকোনা জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা, উত্তরে খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়, দক্ষিনে হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলা,
![]() |
sunamgonj maps |
সুনামগঞ্জ জেলার নামকরণের পটভূমিঃ
ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় সুনামদি নামক জৈনিক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ করা হয় । ( সুনামদি সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রুপ)সুনাম উদ্দিন নামক উক্ত মোগল সৈন্যের কোন এক যুদ্ধে বীরত্বের জন্য মোগল সম্রাট কর্তৃক সুনাম দিকে এখানে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসেবে দান করা হয় । সেই ভূমিতে তিনি একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন পরে তার নামানুসারে বাজারটির নাম দেওয়া হয় সুনামগঞ্জ ।এভাবেই
সুনামগঞ্জ এর নামকরন হয়েছিল বলে জানা যায় ।পরে সেই সুনামদির তৈরি বাজারটি উপজেলা ও জেলা শহরে রূপান্তরিত হয় ।
বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার পূর্বনাম ছিল বনঁগাও । ১৮৭৭ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় । এবং ১৯৮৪ সালে সেটা জেলা তে রূপান্তরিত হয় ।
○○ সুনামগঞ্জ জেলা তে ২৭৭৩ টি গ্রাম আছে।
○○ সুনামগঞ্জ জেলাতে ৮১টি ইউনিয়ন রয়েছে ।
○○সর্বপ্রথম সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৭ সালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ।
○○ সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৪ সালে ।
অন্য পোষ্ট : কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল সময়সূচি
ইতিহাসের সন – গতিধারায় সুনামগঞ্জের ইতিহাস
![]() |
sunamgonj |
১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দ মুবারক দৌলা মালিক লাউরের উজির হন
১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দ খাসিয়া কর্তৃক সেলবরষ, রামধীঘা ও বংশীকুন্ডা পরগনা আক্রমণ ও ৩০০ লোক হত্যা
১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দ ছাতকে ইংলিশ কোম্পানি স্থাপন
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ দশসনা বন্দোবস্ত
১৭৮৮-৯০ খ্রিস্টাব্দ হস্তবোধ জরিপ
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ মরমী কবি রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থের জন্ম
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ মরমী কবি হাছন রাজার জন্ম
১৮৬০-৬৬ খ্রিস্টাব্দ থাকবাস্ত জরিপ
১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ বৃহত্তর সিলেট জেলাকে আসামের অন্তর্ভূক্ত করণ
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ সুনামগঞ্জ মহকুমা স্থাপন
১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ সুনামগঞ্জ সদর থানা স্থাপন
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ ভয়াবহ ভূমিকম্প
১৯০২ খ্রিস্টাব্দ গৌরীপুর জমিদার কর্তৃক ছাতকের ইংলিশ কোম্পানি ক্রয়
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ বঙ্গভঙ্গ
১৯১১ খ্রিস্টাব্দ বঙ্গভঙ্গ রোধ
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ মরমী কবি রাধারমণ দত্তের মৃত্যু
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ শাল্লা থানা স্থাপন ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রতিষ্ঠা
১৯২২ খ্রিস্টাব্দ মরমী কবি হাছন রাজার মৃত্যু, ছাতক ও জগন্নাথপুর থানা স্থাপন
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ সিলেট প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ জামালগঞ্জ থানা স্থাপন ও ছাতক সিমেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠা
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ দিরাই, তাহিরপুর ও ধর্মপাশা থানা স্থাপন
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ সুনামগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠা
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ সাধারণ নির্বাচন
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ গণভোট ও দেশ বিভাগ
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পূর্ববাংলা প্রজাস্বত্ব আইন ও জমিদারী প্রথা বিলোপ
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ যুক্তফ্রন্টের বিজয় ও ছাতকে রেল লাইন প্রতিষ্ঠা
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ মহকুমা আইনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠা
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ সুনামগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ স্বাধীনতা লাভ
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও তাহিরপুর থানা স্থাপন
১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ সুনামগঞ্জ অফিসার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা
১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ সুনামগঞ্জ মহকুমা জেলায় উন্নীত
১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ সিলেট বিভাগ এর কার্যক্রম শুরু
২০০৭ খ্রিস্টাব্দ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা স্থাপন
শিক্ষার হার :
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.৪%; পুরুষ ৩৮.১%, মহিলা ৩০.৫%। পি টি আই ১, কলেজ ৩০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৫০, কারিগরি স্কুল ৫, কিন্ডার গার্টেন ২০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৭২, মাদ্রাসা ১৬৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৪৪), সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৮৪), জয়নাল আবেদীন মহাবিদ্যালয় (১৯৯২), সাল্লা মহাবিদ্যালয় (১৯৮৬), জামালগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ (১৯৮৫), বড়খাল বহুমূখী স্কুল ও কলেজ (১৯৭০), বাদশাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ (১৯৯৪), মধ্যনগর বিপি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৫২), দিরাই ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় (১৯৭৯), ছাতক ডিগ্রী কলেজ (১৯৭২), ছাতক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৮১), দিগেন্দ্রবর্মন কলেজ (১৯৯২), জগন্নাথপুর মহাবিদ্যালয়, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), জয়কলস উজানীগাঁও রশিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), জগন্নাথপুর স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), পাইলগাঁও বি এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), দিরাই উচ্চ বালক বিদ্যালয় (১৯১৫), রাজানগর কৃষ্ণচন্দ্র পাবলিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), সাতগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), আশারকান্দি জাকির মোহাম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৭), সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯০৩), বাহারা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৩১), আনন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৫), দিরাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮০৫), শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), বিশ্বম্ভরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৮)।
সুনামগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা :
মোট জনসংখ্যা 》》》২৪৬৭৯৬৮ জন
পুরুষ 》》》》》》》১২৩৬১০৬ জন
মহিলা 》》》》》》》১২৩১৮৬২ জন
জনসংখ্যার ঘনত্ব 》》》৬৫৯ জন প্রতি বর্গ মিটারে ।
পুরুষ -মহিলা অনুপাত :》》১০১:১০০
সুনামগঞ্জ জেলার উপজেলা সমূহ :
সুনামগঞ্জ জেলাতে ১১ টি উপজেলা রয়েছে ।
● সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ।
● জামালগঞ্জ উপজেলা ।
● ধর্মপাশা উপজেলা।
● তাহিরপুর উপজেলা ।
● বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ।
● দোয়ারাবাজার উপজেলা ।
● জগন্নাথপুর উপজেলা ।
● ছাতক উপজেলা ।
● দিরাই উপজেলা ।
● শাল্লা উপজেলা ।
● দক্ষিণ সুনামগঞ্জ /শান্তিগঞ্জ উপজেলা
●
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি :
১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল ছাতক উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ১১ জন আহত হন। ২৯ জুলাই জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১২ আগস্ট তেলিয়া গ্রামে পাকসেনারা ৮ জন সাধারণ লোককে হত্যা করে। ২৫ আগস্ট দিরাই উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২ জন আহত হন। ৩১ আগস্ট জগন্নাথপুর উপজেলায় শান্তি সভার নামে রাজাকাররা শ্রীরামসী হাইস্কুলে স্থানীয় শিক্ষক, কর্মচারী, ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ও সাধারণ লোকজনের একটি সমাবেশের আয়োজন করে। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা উক্ত সভার ১২৬ জন লোককে হত্যা করে এবং গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া ৮ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা এ উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজারে ৩০ জন লোককে হত্যা করে এবং ১৫০ টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়। সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজ ও আহসানমারা ফেরী ঘাট এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ চলাকালে পাকবাহিনীর আক্রমণে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মঙ্গলকাটার কৃষ্ণনগরে ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ডলুরায় তাদের সমাহিত করা হয়। ৭ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা শত্রু-মুক্ত হয়।
অন্য পোষ্ট : ভালোবাসার মানুষের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায়
হাওর বাওর :
বাংলাদেশের বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরগুলোর আছে মনোমুগ্ধকর নাম যেমন-টাংগুয়ার হাওর, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, দেখার হাওর, হালির হাওর, কড়চা হাওর, পাকনা হাওর, ধলা পাকনা হাওর, আঙ্গরখালি হাওর, খচ্চর হাওর, নখলা হাওর, সানুয়াডাকুয়া হাওর, শৈল চকরা হাওর, হৈশাম হাওর, বড় হাওর, হালিয়ার হাওর, চন্দ্রসোনার থাল হাওর, ডিঙ্গাপুতা হাওর প্রভৃতি।
সুনামগঞ্জের প্রধান নদী:
সুরমা, কুশিয়ারা, ধামালিয়া, যাদুকাটা, বাগড়া, ডাহুকা, সোমেশ্বরী, বাউলী।
পশু-পাখি
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওর পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম। ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাংগুয়ার হাওরকে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ হাওরটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দা ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। এটি সুন্দরবনের পরই বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান। পরিবেশবাদীদের গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে বিপন্ন প্রায় বিরল প্রজাতির ২ শতাধিক পাখি এবং বিপন্ন ১৫০ প্রজাতি মাছের সমাগম এ হাওরে। টাংগুয়ায় রয়েছে স্তণ্যপায়ী দুর্লভ জলজ প্রাণী গাঙ্গেয় ডলফিন (শুশুক), খেঁকশিয়াল, উঁদ, বনরুই, গন্ধগোকুল, জংলি বিড়াল। উদ্ভিদের মধ্যে নলখাগড়া, হিজল, করচ, বরুন, রেইনট্রি, পদ্ম, বুরো গোলাপসহ ২০০ প্রজাতির অধিক দেখা মেলে।
সুনামগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান
● শাহ আরেফিন মাজার
● পনাতীর্থ স্থান
● বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম মিউজিয়াম ধল
● হাসন রাজা মিউজিয়াম ।
● হাসন রাজার বাড়ি ।
● পাহাড় বিলাস
● হাওর বিলাস
● শিমুল বাগান
● নীলাদ্রি
● শহীদ সিরাজ লেক
● বারিক্কার টিলা
● বাঁশতলা শহীদ স্মৃতিসৌধ ।
● ডলুরা স্মৃতিসৌধ ।
● টাংগুয়ার হাওর ।
● সুখাইড় রাজবাড়ি
● অতিথি ভবন
● লাল পাহাড়
ইত্যাদি ।