আসসালামু আলাইকুম
সুপ্রিয় বন্ধুরা সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি আজকের এই নতুন একটি আর্টিকেলে ।
আজকের আর্টিকেলটি হচ্ছে জন্মনিবন্ধন বিষয়ে । সবার প্রতি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো ।
![]() |
জন্ম নিবন্ধন কি |
আজকের আর্টিকেল শিরোনাম :
১> জন্ম নিবন্ধন কি ?
২> জন্ম নিবন্ধন কেন করতে হয় ?
৩> জন্ম নিবন্ধন করা কেন জরুরি ?
৪> জন্ম নিবন্ধন কি কি কাজে লাগে ?
৫> জন্ম নিবন্ধন না করলে যেসব
সমস্যায় পড়তে পারেন
৬> জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজ
পত্র লাগে
৭> জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে
৮> অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া
৯> জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ
এইছিল আজকের আর্টিকেল শিরোনাম এবার নিচে বিস্তারিত :
জন্ম নিবন্ধন কি
জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ দেশের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপের জন্য একটি অপরিহার্য নথি জন্ম নিবন্ধন সনদ। জন্মসূত্রে একজন ব্যক্তির নাগরিকত্বের পরিচয় ধারণ করে এই জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রটি। তাই শিশু জন্মের পর পরই অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বাবা-মায়ের উচিত সরকারি খাতায় শিশুর নামটি লিপিবদ্ধ করানো।
জন্ম নিবন্ধন কেন করতে হয়
জন্ম নিবন্ধন করা কেন জরুরি?
■ জন্ম সনদ হলো একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
জন্ম নিবন্ধন কি কি কাজে লাগে :
>> পাসপোর্ট ইস্যু
>> বিবাহ নিবন্ধন
>> শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
>> সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান
>> ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
>> ভোটার তালিকা প্রণয়ন
>> জমি রেজিষ্ট্রেশন
>> ব্যাংক হিসাব খোলা
>> আমদানি ও রপ্তানী লাইসেন্স প্রাপ্তি
>> গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি
>> ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি
>> ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি
>> বাড়ির নকশা অনুমোদন প্রাপ্তি
>> গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন
>> ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি
>> বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ
>> শিশু শ্রম প্রতিরোধ ও
>> জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি।
জন্ম নিবন্ধন না করলে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন-
>> ভোটার আবেদন ফরমের সঙ্গেও বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতে হয়। জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা যায় না।
>> স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রদর্শন করতে হয়। অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকার ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না।
>> শিশুরা যদি কখনো কিশোর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, সেক্ষেত্রে বিচার শুরুর আগেই তার বয়স প্রমাণের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
>> পড়াশোনা, জীবিকা, ব্যবসা, ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যেতে প্রয়োজন হয় পাসপোর্টের। আর পাসপোর্টের আবেদন ফরমের সঙ্গে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন জমা দিতে হয়।
>> সরকারি চাকরি বা স্বায়ত্তশাসিত চাকরির ক্ষেত্রেও বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করতে হয়।
>> বিয়ের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিয়ের সময় বয়স প্রমাণের জন্য এটি ভূমিকা পালন করে।
>> এমনকি সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের পর রেজিষ্ট্রেশনের সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। এই সনদ না থাকলে এক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে ।
>> সরকারি বা বেসরকারি সব ধরনের সেবা ও সম্পদের বরাদ্দ পেতে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
>> অনেকেই ১৮ বছরের পরপরই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। তখন আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় নয় বরং জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে।
জন্ম নিবন্ধন আইনের বিধান অনুযায়ী এই বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা ব্যক্তি অনধিক ৫০০ টাকা অথবা অনধিক ২ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজ পত্র লাগে
জন্ম নিবন্ধন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রথমেই কিছু কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। এর জন্য বিভিন্ন বয়সের লোকদের জন্য কাগজপত্রেও ভিন্নতা রয়েছে।
শিশুদের জন্ম নিবন্ধকরণে জন্মের পর প্রথম ৪৫ দিনের মধ্যে যে কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন তা হলো-
১। অনলাইনে আবেদনকৃত ফর্মের প্রিন্ট কপি।
২। শিশুর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৩। শিশুর ইপিআই (এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন) টিকা কার্ড কিংবা ইপিআই কর্মীর নিকট থেকে প্রত্যয়নপত্র
৪। শিশুর জন্মস্থান ও জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র হিসেবে হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে শিশুর জন্ম সনদের সত্যায়িত অনুলিপি বা বার্থ এটেনডেন্ট-এর প্রত্যয়ন পত্র বা শিশুর জন্ম সংক্রান্ত অন্য কোনো প্রমাণ পত্র।
৫। বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই বাবা-মার অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদ।
৬। বাবা-মার জাতীয় পরিচয়পত্র।
৭। শিশুর যে কোন একজন অভিভাবকের কর পরিশোধের প্রমাণ।
৪৬ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে উপরোক্ত ৪ নং বাদে বাকি সব কাগজপত্রই লাগবে।
৫ বছরের বেশি শিশু অথবা যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে-
১। অনলাইনে আবেদনকৃত ফর্মের প্রিন্ট কপি।
২। শিশুর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৩। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত এমবিবিএস বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী চিকিৎসক-এর নিকট থেকে প্রত্যয়ন পত্র।
৪। পিএসসি(প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী), জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) বা এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট)।
৫। বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই বাবা-মায়ের অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদ।
৬। বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র।
৭। জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের সাপেক্ষে বাবা/মা/দাদা/দাদির স্বনামে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখিত জায়গার বিপরীতে নবায়নকৃত কর প্রদানের প্রমাণপত্র
অথবা, নদীভাঙন/কোনো কারণে স্থায়ী ঠিকানা বিলুপ্ত হলে জমি/বাড়ি ক্রয়ের দলিল, খাজনা ও কর প্রদানের রশিদ।
অথবা, বসবাসের স্থান প্রমাণের সাপেক্ষে পৌরসভার চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র।
আরো পড়ুন > এনআইডি কার্ড কি - Nid card কি কাজে লাগবে
জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন আবেদন ক্ষেত্রে :
● নবজাতক শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত
বিনামূল্যে ।
● নবজাতক শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর
থেকে -৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ।
● শিশু জন্মের ৫ বছর পর থেকে -৫০ টাকা ।
বিদেশে জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে :
● নবজাতক শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত
বিনামূল্যে ।
● নবজাতক শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর
থেকে -৫ বছর পর্যন্ত ১ মার্কিন ডলার ।
● শিশু জন্মের ৫ বছর পর থেকে -১ মার্কিন ডলার ।
জন্ম নিবন্ধন কিভাবে করতে হয় :
Online Registration for Birth Certificate
(http://bris.lgd.gov.bd/pub/?pg=application_form)। বিভিন্ন ধাপে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। প্রথমে নিবন্ধনকারীর জন্ম স্থান বা স্থায়ী ঠিকানার বিভাগ, জেলা, প্রভৃতি ধাপ পার হয়ে ওয়ার্ড পর্যন্ত নির্বাচন করতে হয়। অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফরম প্রথমে বাংলায় ও পরবর্তীতে ইংরেজিতে পূরণের পর প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন। সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করলেই আবেদন পত্রটি সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক কার্যালয়ে স্থানান্তিরত হয়ে যায়, আবেদনকারীর আর কোনো সংশোধনের সুযোগ থাকে না। অতঃপর পরবর্তী ধাপে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করলে আবেদন পত্রের মুদ্রিত কপি পাবেন। সনদের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে উক্ত আবেদনপত্রে নির্দেশিত প্রত্যয়ন সংগ্রহ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপিসহ নিবন্ধক অফিসে যোগাযোগ করুন।
জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ
How to get Birth Certificate :
জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় সনদ প্রদানের সম্ভাব্য একটি তারিখ একটি কুপনে লিখে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কুপন প্রদান করে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হয়। জন্ম নিবন্ধন সনদ একটি শক্ত কাগজ (আর্ট পেপার) যেটার উপরে আপনার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, পিতা-মাতার নাম সহ যাবতীয় তথ্য ছাপানো আছে। নিচে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের স্বাক্ষর থাকে।
প্রশ্নাবলি:
একজন ব্যাক্তি কি একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে ?
¤ একই ব্যাক্তি একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে না । কারন একই ব্যাক্তির একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করা দন্ডনীয় অপরাধ ।( দেখুন: জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪)
2) জন্ম নিবন্ধনে ভুল হলে সংশোধন করা যায় কি না ?
¤ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন এ ভুল হলে পরবর্তীতে সেটা সংশোধন করা যাবে ।আরো পড়ুন : অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এর বিস্তারিত
আরো পড়ুন : জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন কিভাবে করবো