মানসিক চাপ প্রত্যক্ষভাবে যতটা ক্ষতি করছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে পরোক্ষ মানসিক চাপবিষয়ক নেতিবাচক চিন্তা।
আজকে আর্টিকেলে থাকছে
মানসিক চাপ কি ?
Stress কি কাকে বলে ?
অতিরিক্ত মানসিক চাপের লক্ষন?
মানসিক চাপ কমানোর উপায় ?
শুরু করছি আজকের আর্টিকেলটি।
![]() |
মানসিক চাপ কি |
Stress কাকে বলে?
মানসিক চাপ কি
চিকিৎসা বা জীব বিজ্ঞানের আলোকে, Stress বা চাপ হলো একটি শারীরিক, মানসিক, বা আবেগময় বিষয় যা বা দৈহিক বা মানসিক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাপ হতে পারে বাহ্যিক (পরিবেশ, মনস্তাত্ত্বিক বা সামাজিক পরিস্থিতি থেকে) বা অভ্যন্তরীণ (অসুস্থতা বা কোনও চিকিত্সা পদ্ধতি থেকে) ।
মানসিক চাপে থাকা একজন ব্যক্তির মাঝে কগনিটিভ, শারীরিক, আবেগীয়, আচরণগত বিভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
মানসিক চাপের লক্ষন
অতিরিক্ত ঘুমভাব দেখা দেওয়া
মানসিক চাপ বেড়ে গেলে অতিরিক্ত ঘুমভাবের প্রবণতা দেখা দেয়। এটাকে বলা হয়ে থাকে স্ট্রেস-বেসড-ফ্যাটিগ তথা মানসিক চাপ থেকে শারীরিক ক্লান্তি দেওয়া দেওয়া। ২০১৫ সালের অ্যামেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অন্তত ৩২ শতাংশ মানুষ মানসিক চাপের দরুন ক্লান্তি ও ঘুমভাবের লক্ষণ প্রকাশ করে।
অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণ হয়ে ওঠা
মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বেড়ে যায় বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক অনুভূতিও। রাগ, হতাশা, একাকিত্ব, ভয়- এই সকল ধরণের অনুভূতিগুলো আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। মনের এই নেতিবাচক অনুভূতি শারীরিকভাবেও প্রভাব ফেলে। যার ফলে বুকের ভেতর থম ধরে থাকা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, শরীর ঘেমে ওঠার মত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া
মানসিক চাপযুক্ত কিছু পরিস্থিতিতে ভয় সম্পূর্ণভাবে মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যার ফলস্বরূপ সাময়িকভাবে কোন কিছু বোঝার অনুভূতি কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়, শরীরে আড়ষ্টভাবে চলে আসে, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয় এবং নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। মানসিক বড় ধরণের বিপর্যয়ে শরীরের এমন অবস্থায় চলে যাওয়াকে বলা হয় ডিসোসিয়েশন (Dissociation), যা বাস্তব ঘটনার দরুন বড় ধরণের শারীরিক হুমকিকে বাধাদান করে।
জ্ঞান হারানোর মতো বোধ হয়
অন্য পোষ্ট : ঈদুল আযহা ২০২২
কলোরাডোর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অ্যারিয়েল শোয়ার্টজ জানান, অতিরিক্ত মানসিক চাপের মুখে অনেকের চোখে ঘোলা দেখা, বমিভাব দেখা দেওয়া, সোজা হয়ে বসে থাকতে কষ্ট হওয়া এবং যেকোন মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো প্রবণতা দেখা দিতে পারে। বেশি জটিল কোন ক্ষেত্রে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) দেখা দেয়। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির সমস্যাটিও দেখা দিয়ে থাকে। মানসিক চাপ বহন করার ক্ষমতা সকলের এক রকম নয়। মানসিক চাপ থেকে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এমন সময়ে শরীর নিজ থেকে ‘শাট ডাউন’ বা বন্ধ হয়ে যায়, যা থেকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।
শরীরে ব্যথাভাব দেখা দেওয়া
আপনার কি প্রায়শ ঘুম থেকে উঠতেই পুরো শরীরে ব্যথাভাব দেখা দেয়? মনে হয় যেন কয়েক ঘন্টা যাবত অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করা হয়েছে, অথচ আদতে তেমন কোন কাজই করা হয়নি! মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, কোমড়ে ব্যথা, পেশীতে ব্যথাভাব দেখা দেওয়ার সমস্যাটিও মানসিক চাপের সাথে জড়িত বলে জানাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার অ্যাসোসিয়েশন।
* অতিরিক্ত অথবা কম খাদ্যগ্রহণ
* অনেক বেশি অথবা অনেক কম ঘুমানো
* সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া
* দায়িত্বপালনে অবহেলা করা অথবা গড়িমসি করা
* মানসিক প্রশান্তির জন্য সিগারেট, এলকোহল বা বিভিন্ন ড্রাগস নেয়া।
তাছাড়া, দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ ব্যক্তির মাঝে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, প্রজনন ক্ষমতাহ্রাস, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদির সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুন > এনআইডি কার্ড কি কি কাজে লাগে
মানসিক চাপমুক্ত থাকার উপায়
ইচ্ছা করলে মানসিক চাপমুক্ত থাকা যায়। এ জন্য কিছু করণীয় হলো :
১) সদা হাসিখুশি থাকুন :গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে অন্তত ১৫ বার মন খুলে হাসে তাদের মানসিক চাপ অনেক কমে যায়। শিশুরা সহজেই হাসতে পারে বলে তাদের মানসিক চাপও কম। হাসিখুশি থাকলে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নামের স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন কমে।
অন্য পোষ্ট : অদ্ভূত মজার সাইকোলজিক্যাল হ্যাকস
২) পায়ের পাতার ব্যায়াম করুন : এটা মানসিক চাপ কমানোর প্রাচীন ও কার্যকর একটি পদ্ধতি। পায়ের পাতার নিচে ছোট এক টুকরা কাঠির মতো কিছু রেখে দিন। পাঁচ মিনিট ওটাকে রোল করে সামনে-পিছে নিন। এতে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিনস নামের হরমোন নিঃসরণ হওয়ায় চাপ কমায়।
৩) কায়িক শ্র্রম দিন, ব্যায়াম করুন : নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে দেহে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে যায়, শরীর ফিট থাকে। তখন অসুখ-বিসুখও কম হয়। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে উদ্বিগ্নতা নিসরণকারী এনডোর্ফিনস হরমোন নিঃসৃত হয়।
৪) অতিরিক্ত চর্বি ও তেলযুক্ত খাবার কম খান : অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো হজম হতেও সময় লাগে। অনেক অসুখ-বিসুখের কারণও এসব খাবার। এসবের পরিবর্তে সবুজ শাকসবজি, বাদাম, ননিবিহীন দুধ ইত্যাদি খান। এগুলোতে থাকা ভিটামিন ই, বি, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক মস্তিষ্ক চাঙ্গা রাখতে সহায়তা করে।
৫) জোরে জোরে দম নিন : যখন কোনো কিছু নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকেন বা আকস্মিক কোনো বিপদের মুখে পড়েন, তখন দীর্ঘশ্বাস নিন। কিছুক্ষণ ধরে রেখে ছেড়ে দিয়ে আবার দীর্ঘশ্বাস নিন। এভাবে কয়েক মিনিট পর আবার করুন। এতে শরীর ও মস্তিষ্কের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হয়ে আসে, মানসিক চাপও কমে যায়।